ভি কে জয়:
গত ২ নভেম্বর, ২০২২, বুধবার দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের উদ্যোগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন এর জীবনপুর, গোপালপুর ও ছয়ঘড়িয়া এলাকায় পল্লীতে গড়ে ওঠা অবৈধ কাঠকয়লার কয়েকটি কারখানা গুড়িয়ে অভিযান দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। কিন্তু কিছুদিন পরেই মাথা চাড়া দিয়ে আবারও একইভাবে তারা এই কয়লা পোড়ানোর চুল্লি পুনঃস্থাপন করেছে। হরদম চলছেও এসব চুল্লি। সাথে বাড়ছে এজমা, COPD, ফুসফুস ক্যান্সার ও যক্ষাসহ নানা রোগী। অতিসত্বর এসব চুল্লি বন্ধ করা না হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০৪১ বা বিশ্ব পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ঘোষণা, কোনোটিরই সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে ‘পল্যুশন অ্যান্ড হেলথ: আ প্রোগ্রেস আপডেট’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এর তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন প্রকার দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে শুধু বায়ু দূষণের কারণেই সর্বাধিক ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়। এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ পায় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যে। অথচ বায়ু দূষণের অন্যতম মূল ঘাঁটি হয়ে উঠেছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন এর জীবনপুর, গোপালপুর ও ছয়ঘড়িয়া এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েকটি কয়লা তৈরির কারখানা। শুধু বায়ু দূষণ নয়, পরিবেশ দূষণের এক সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এই কয়লা কারখানাকে ঘিরেই ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ এর অগ্রযাত্রায় বড় বাঁধা সৃষ্টি করবে এসব কয়লা কারখানা। মহিমাগঞ্জ এর কোনো নির্জন এলাকায় নয়, বরং জনবসতির ১০০ মিটার দূরে আবাদী জমির উপর চোখে পড়বে ছোট ছোট সাদা রঙের ঢিবি। নির্বিচারে কেটে আনা মণকে মণ গাছ এসব চুল্লিতে পুড়িয়ে বানানো হয় কয়লা। আর নির্গত ধোঁয়ার কুণ্ডলী দূষণ ছড়াচ্ছে আশেপাশের পরিবেশে। হুমকিতে পড়ছে মহিমাগঞ্জের জনজীবন ও জৈববৈচিত্র্য। গাছ ও কাঠ থেকে কয়লা পুড়িয়ে যে ধোঁয়া হয়ে তা থেকে নিগর্ত হয় বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার অক্সাইড গ্যাস। অন্যদিকে গাছ পুড়িয়ে কয়লা বানাতে গাইবান্ধার প্রচুর বন উজার করা হচ্ছে। এত বৃক্ষ নিধনে পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপক হারে বিপর্যস্ত হচ্ছে। মহিমাগঞ্জের প্রচুর আবাদী জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে ব্যাপক হারে। শত শত আবাদী জমির জায়গাও কমে গিয়েছে। চুল্লি থেকে নির্গত সালফার অক্সাইড ধোঁয়ায় আশপাশ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে একদিকে এলাকায় শ্বাসজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে উঠতি ফসলের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়তই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে বলছেন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে।” অন্যদিকে, সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেছেন, “ গাছ কাটা ও তা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ”। অথচ সেই রংপুর বিভাগেই বৃক্ষ নিধনের এমন একটি ঘাঁটি সজোরে চলমান।
Leave a Reply