মোঃ আরমান চৌধুরী (স্টাফ রিপোর্টার) ॥ খুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর প্রতিনিয়ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেই চলছে। এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সরকার, প্রশাসন কারোরই এদিকে খেয়াল নেই। সাধারণ জনগণ নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রেণির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।সরেজমিনে খুলনার গল্লামারী,নিরালা,রুপসা,সন্ধ্যা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য কেজিতে দশ থেকে পনেরো টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচাবাজারে সবজির পর্যাপ্ত জোগান থাকা সত্ত্বেও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত শেষে সবজির দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। করলা কেজি ১৪০-১৬০ টাকা, পোটল ১০০-১২০, লাউ ৩০-৪০, আলু ২৫-৩০, বরবটি ১১০-১২০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০টাকা,বয়লার মুরগী ২৩০টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা,তেলাপিয়া ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।উৎপাদক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দ্রব্যই কৃষকের বিক্রীত মূল্যের ৪/৫ গুণ অধিক মূল্যে ভোক্তাসাধারণ ক্রয় করছে। এ ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, তাঁদের চড়া দামে পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে। পাইকাররা দাম বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলে ও বিদ্যুৎ এর মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়, ইত্যাদিকে দায়ী করেন।মুদি-মনোহারি দ্রব্যের দোকানে গিয়ে দেখা যায় তেল, আটা, ময়দা ইত্যাদির দাম প্রতি কেজিতে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে পনেরো হতে বিশ টাকা পর্যন্ত। সয়াবিন তেল ১৮০-১৯০ টাকা, চিনি ১২০-১৩০, মসুর ডাল ১২০-১৩০, আটা ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। গুড়, গুঁড়োদুধ ও শিশুখাদ্যের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে গড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।ডিম, মুরগি, মাছের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মুদি-মনোহারি দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের যথাযথ তদারকির অভাব, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ইত্যাদি কারণ উল্লেখ করেন।কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে দেখা যায়, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। একজন ভ্যানচালক ক্ষোভের সঙ্গে জানান তার সারা দিনের আয়ে পরিবারের জন্য দুবেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় হচ্ছে না। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকার শীঘ্রই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করবে।এ অবস্থায় সরকারকে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধ, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু, জেলা শহরগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বাজারে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার জনগণকে বর্তমান অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার, ব্যবসায়ী, জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে।
Leave a Reply